টিন সার্টিফিকেট করতে কত টাকা লাগে

ছোট বড় সকল ব্যবসায়ীরা কম বেশি টিন সার্টিফিকেট এর সাথে পরিচিত। শুধুমাত্র ব্যবসায়ী না বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজের টিন সার্টিফিকেট প্রয়োজন হয়। এই লেখাটিতে টিন সার্টিফিকেট করতে কত টাকা লাগে এই সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।

টিন সার্টিফিকেট কি কি কাজে ব্যবহৃত হয় এবং কেন আপনার এই সার্টিফিকেট প্রয়োজন এ সম্পর্কে অবশ্যই জানা দরকার। বিশেষ করে ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে টিন সার্টিফিকেট অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। টিন সার্টিফিকেট এর মাধ্যমে করদাতা নিশ্চিত করা হয়। 

টিন সার্টিফিকেট কি?

টিন – এর পূর্ণরূপ হল ট্যাক্সপেপার আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার। টিন সার্টিফিকেট এর মাধ্যমে করদাতা যাচাই করা হয়। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের জন্য অবশ্যই টিন সার্টিফিকেট  প্রয়োজন। টিন সার্টিফিকেটে একটি নাম্বার দেয়া থাকে এটি মূলত করদাতাদের পরিচয় বহন করে। 

আপনি যদি এদেশের একজন নাগরিক হয়ে থাকেন এবং ব্যবসার সাথে জড়িত থাকেন সেক্ষেত্রে অবশ্যই আপনার টিন সার্টিফিকেট  থাকতে হবে অন্যথায় আপনার বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রাহন করা হতে পারে। ব্যবসা বাদেও বিভিন্ন ক্ষেত্রে টিন সার্টিফিকেট  এর প্রয়োজন হয়।

কাদের জন্য টিন সার্টিফিকেট প্রয়োজন? 

আয়কর সিস্টেম সম্পর্কে আমরা কম বেশি সকলে জানি। বাংলাদেশ সহ বিভিন্ন দেশে এই আয়কর সিস্টেম চালু আছে। কোন ব্যক্তির বাৎসরিক ইনকাম ও কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে আয়কর প্রদান করা জরুরী এবং অবশ্যই টিন সার্টিফিকেট তৈরি করা প্রয়োজন। 

যে সকল ব্যক্তি বা কাজের জন্য টিন সার্টিফিকেট প্রয়োজন সেগুলো হলঃ

  • ৬৫ বছরের বেশি বয়স্ক মহিলা যদি বছরে ৩ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার বেশি আয় করে সেক্ষেত্রে তাকে আয়কর প্রদান করতে হবে।
  • VAT সংযোজন আইন ১৯৯১ অনুযায়ী কোন ক্লাবের সদস্য পদে থাকলে।
  • নিজস্ব কোন গাড়ির মালিক থাকলে।
  • বাৎসরিক ইনকাম ৩ লক্ষ টাকার উপরে হলে।
  • কোন ট্রেড এসোসিয়েশন এর সদস্য হলে।
  • কোন ব্যাংক থেকে ক্রেডিট কার্ডের জন্য আবেদন করতে টিন সার্টিফিকেট প্রয়োজন। 
  • যেকোনো ধরনের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে টিন সার্টিফিকেট প্রয়োজন। 
  • ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য টিন সার্টিফিকেট তথা ট্রেড লাইসেন্স প্রয়োজন। 
  • সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, বা আদা-সরকারি প্রতিষ্ঠানের কোন ঠিকাদারি কাজের টেন্ডার এ অংশগ্রহণের জন্য।
  • ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে বিদেশ থেকে কোন পণ্য আমদানির জন্য। 
  • কোন কোম্পানির শেয়ার ক্রয়ের ক্ষেত্রে। 
  • সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন বাড়ি, ফ্ল্যাট বা জমি রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে।
  • নিজস্ব কোন কোম্পানি নিবন্ধনের ক্ষেত্রে।
  • আইনজীবী, প্রকৌশলী, ডাক্তার, স্থপতি এ সকল পেশায় নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গের টিন সার্টিফিকেট প্রয়োজন।

এছাড়াও বিভিন্ন ক্ষেত্রে টিন সার্টিফিকেট  এর প্রয়োজন হয়। টিম সার্টিফিকেট দ্বারা সরকারিভাবে আয়কর নির্বাচন ও আয়কর প্রদান কারি গণনা করা হয়। অনলাইনে ভোটার আইডি কার্ড দেখার নিয়ম।

টিন সার্টিফিকেট করতে কত টাকা লাগে

টিন সার্টিফিকেট করতে কত টাকা লাগে? টিন সার্টিফিকেট করতে কোন ধরনের টাকার প্রয়োজন হবে না। সম্পূর্ণ ফ্রিতে বিনামূল্য টিন সার্টিফিকেট করতে পারবেন। বর্তমানে প্রযুক্তিগত উন্নয়নের ফলে ঘরে বসে ই-টিন সার্টিফিকেট এর জন্য অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন। 

ই-টিন সার্টিফিকেট করার জন্য কোন ফি প্রয়োজন নেই। এই সেবা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে গ্রহণ করতে পারবেন। তবে টিন সার্টিফিকেট করার পরে ন্যূনতম আয়কর ট্যাক্স হলো ঢাকা ও চট্টগ্রামে ৫,০০০ টাকা এবং অন্যান্য সিটি কর্পোরেশনে ৪,০০০ টাকা। সিটি কর্পোরেশন ব্যতীত অন্য সকল জায়গায় ৩,০০০ টাকা। 

ফ্রিল্যান্সারদের ক্ষেত্রে টিন সার্টিফিকেট এর গুরুত্ব 

অনেকে বলে থাকি ফ্রিল্যান্সারদের টিন সার্টিফিকেট করার প্রয়োজন। কিন্তু বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের জনপ্রিয় নিউজ পোর্টাল Somoy Tv এর একটি প্রতিবেদনে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী ২০২৪ সালের আগ পর্যন্ত ফ্রিল্যান্সারদের কোন ধরনের আয়কর প্রদান করা প্রয়োজন নেই। 

তবে ২০২৪ সালের পর থেকে ফ্রিল্যান্সারদের ক্ষেত্রে ইনকামের উপর ভিত্তি করে আয়কর প্রদান করা প্রয়োজন হতে পারে। এ সম্পর্কে এখন পর্যন্ত সঠিক কোন তথ্য জানানো হয়নি। আপাতত ফ্রিল্যান্সারদের ক্ষেত্রে টিন সার্টিফিকেট সম্পর্কিত কোন তথ্য সঠিকভাবে প্রদান করা সম্ভব নয়। 

টিন সার্টিফিকেট করতে কি কি প্রয়োজন 

আপনার ব্যক্তিগত নামে কিংবা কোম্পানির নামে টিন সার্টিফিকেট করার জন্য অবশ্যই কিছু ডকুমেন্টস প্রয়োজন হবে। টিন সার্টিফিকেট করতে কি কি ডকুমেন্টস প্রয়োজন তা নিচে উল্লেখ করা হলো।

  • আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয় পত্র।
  • আবেদনকারীর নাম এবং ঠিকানা জাতীয় পরিচয় পত্র অনুযায়ী।
  • আবেদনকারীর পিতা ও মাতার নাম। 
  • আবেদনকারীর বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা। 
  • আবেদনকারীর মোবাইল নাম্বার।
  •  কোম্পানির ক্ষেত্রে আরজেএসসি নাম্বার।

অনলাইনে কিংবা অফলাইনে আই করার তথা টিন সার্টিফিকেট নিবন্ধনের জন্য উক্ত ডকুমেন্টসগুলো প্রয়োজন হবে। 

টিন সার্টিফিকেট এর সুবিধা ও অসুবিধা 

টিন সার্টিফিকেট এর ও কিছু সুবিধা ও অসুবিধা রয়েছে। তবে যত সুবিধা অসুবিধা থাকুক না কেন অবশ্যই আপনাকে টিন সার্টিফিকেট করতে করতে হবে। 

সুবিধাঃ টিন সার্টিফিকেট থাকলে আপনি একজন গর্বিত করদাতা হিসেবে বিবেচিত হবেন। এছাড়াও যে কোন ব্যাংক থেকে ঋণ অথবা ক্রেডিট কার্ড গ্রহণের জন্য অবশ্যই টিন সার্টিফিকেট প্রয়োজন হবে। এবং সঞ্চয়পত্র আপনার জমা কৃত টাকার ১০% কেটে নেয়া হবে যদি টিন সার্টিফিকেট না থাকে তাহলে ১৫% কাটা হবে। 

অসুবিধাঃ টিন সার্টিফিকেট এর তেমন কোন অসুবিধা নেই। এর সব থেকে বড় অসুবিধা হলো আপনার করযোগ্য আয় না থাকলেও প্রতিবছর আপনাকে অবশ্যই কর ট্যাক্স রিটার্ন দাখিল করতে হবে। যদি ট্যাক্স রিটার্ন জমা না দেন তাহলে আপনার আইকৃত টাকা কালো টাকা হিসেবে গণ্য করা হবে।

অন্যতম একটি সুবিধাঃ এবং যদি পর পর ৩ বছর আপনার আয় কর যোগ্য না হয় তাহলে ৪র্থ বছর থেকে আয়কর রিটার্ন দাখিল না করলে চলবে। এছাড়াও আপনি যথেষ্ট কারণ উল্লেখ করে আয়কর নিবন্ধন বাতিল করতে পারবেন।

টিন সার্টিফিকেট হেল্পলাইন নাম্বার 

টিন সার্টিফিকেট সম্পর্কিত যেকোনো তথ্য জানতে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারেন টিন সার্টিফিকেট এর হেল্পলাইন নাম্বারে অথবা ইমেইল করতে পারেন। টিন সার্টিফিকেট এর হেল্পলাইন নাম্বার হল 09611-777111 ও  333 যেকোনো সমস্যার জন্য সরাসরি এই নাম্বারে যোগাযোগ করতে পারেন।

অথবা চাইলে আপনার সমস্যার কথা উল্লেখ করে সরাসরি ই-মেইল করুন info@incometax.gov.bd এই ঠিকানায়। 

প্রিয় পাঠক বৃন্দ, আশা করি টিন সার্টিফিকেট করতে কত টাকা লাগে এবং টিন সার্টিফিকেট সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য জানতে পেরেছেন। একজন সু-নাগরিক হিসেবে অবশ্যই আয়কর প্রদান করতে হবে। 

Sharing Is Caring:

এই ওয়েবসাইটি মূলত প্রযুক্তির খবর, ব্যাংক ও বিমা, পড়াশোনা, টিপস এন্ড ট্রিকস, ভিসার খবর, স্বাস্থ্য টিপস ও অনলাইন ইনকাম সম্পর্কিত তথ্যের বিরাট একটি প্ল্যাটফর্ম।

Leave a Comment